বিক্ষিপ্ত সংসার
সাইফুল ইসলাম মজুমদার
হেসমে আন্ডা চোড চোড আছিলাম, এই ধরেন বেয়ান য়ইলেই ঘুমেত্তুন উডি বালা করি মুক্কান ধুই ই মক্তবে যাইতাম। কোনস্সমে কিচু খাই যাইতাম আর কোনসমে কোত্তার পকেটত করি কিচু লই যাইতাম।এই মুরি, বিস্কুট, মোলা ইত্তাদি। আন্ডা অত্তরে প্রায় ১০ কি ১২ জন যাইতাম, বইতাম ও এক লগে। এর বিত্তে একজনের নাম কলিম।
আন্ডা হত্যেকদিন কিচু ন কিচু খাইতাম মোক্তবে বই বই
কিন্তু কলিম তারারে কোন সমেই দেখি নো কিচু খাইতে।
যাই য়ক আঁই আর মূল কতায় আই যাই।
আন্ডা শ্রী- বোররা গেরামের এক্কেরে শেষ কিনারে লালচান কাগুর গো বাই। ইনে আরেক্কেন কতা কই লই যে, আন্ডা গেরামের লগের গেরামের নাম গোয়াঁইহুর(গোসাই পুর)। হের পরের গেরামের নাম শ্রী হুর(শ্রীপুর, ফফুলগাজী, ফেনী। সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার গ্রামের বাড়ি)। হুনতে মনে হয় যে এগুলান হুরাই হিন্দু গেরাম। কিন্তু আসল কতা য়ইলো এই গেরাম গেনেত্তে আগে হরে ২ ভাগ করিও হিন্দু বাড়ি নাই। কারন হইলো, একসমে এসব এলাকায় হিন্দু বোয়ত আচিল। আর হেটা মনে হয় ২০০- ৩ ০০ বৎসর আগের কতা। শাহজালাল(র) সহ বিভিন্ন ইসলাম ধর্ম প্রচারকারীর কাচেত্তুন দিক্ষা লই আমগো আশেপাশের জেলাগুলার মানুষেরা মোসলমান হই গেচিলো। হের লগে আন্ডা দাদার দাদারা সহ বেশীরভাগ ই মুসলমান হইচিল। আর শেষে যে অল্প কয় জন আছিলো হিগুন ৭১ এ পাকিস্ত্মান বাংলাদেশ যুদ্বের সমে হিন্দুস্ত্মান চলি গেছে বলি কইছিল আন্ডা দাদা দাদী রা। হের পরে আর উলেস্নখ যোগ্য কোন হিন্দু পরিবার নাই।
মূল কতায় আসি যাই, যে লালচান কাকার কতা কইতাম লাইগজিলাম।
হেমিয়া সহ আরো কয়েকজন জেলে আচিল আন্ডা গেরামে। তো আন্ডা দেইকতাম যে হেতারা ছোড ছোড হোয়া অলা, বড হোয়া অলা, বিভিন্ন আকারের জাল লই আশেপাশের জলা জাগা, ডেবা( এক ধরনের নরম ইলাস্টিক ধরনের মাটি, যেগুলাতে সবসময় মাছ ও পানি থাকে,তবে ওগুলাতে নামলে পা আটকে যাওয়ার ভয় আছে), গাঙ এ মাছ চাইতো যাইতো। গাঙ এ বড় বড় মাছ থাইকতো। এই ধরেন, শোল, বোয়াল, আইর, বড় আকারের মাগুর, বড় চিংড়ি, পাবদা ইত্যাদি।
তার পরে গেরামের চোড খাড ডোবা যেগুনা সেগুনাতে বিভিন্ন ধরনের চোড মাছ, হুঁডি, জাগুর, চোড পাবদা, হিং, দাঁইয়্যাঁ ইত্যাদি।
এ সমস্ত্ম মাছ ধরি হেতেরা গেরামের গিরস্ত্মগো কাছে বেইছতো। আগে কই রাখন বালা দে চানমিয়া কাগুও গো কোন জমি তমি আছিল না। মাছ ধরি বা জাল বানাই বা মাডি তাডি কাডি কোনরকম সঙসার চালাইতো।
এর বিত্তে দেখা যাইতো দে কোনদিন খাইতো ৩ বেলা, কোণদিন ২ বেলা বা ১ বেলা।
এই ধরেন যেদিন বালা আয় রোজগার য়ইতো হেদিন ধুম ধাম গোস্ত্ম মোস্ত্ম দি খাই হেলার। আবার দেখা যাদ্দে হের হরের দিন ন খাই থাকন লাগের। এই ব্যপার টা আঁর কাচে আজগুবি লাগে!
আরে ব্যাডা আইজ্জা খাইবি তো কাইলস্নার কতা চিন্ত্মা কইরবি না? কিন্ত্মু না! হেতারা হে ব্যপারে কোন ভাবনা চিন্তা কইত্তোনো যে কাইল্লা কি য়ইবো।
এই ধরেন দে আরেকজনে রিস্সা চালার, হারাদিন ২০০ টেঁয়া রুজি কইচছ। কাইল্লার চাইল কিনন লাগেত্ত হেগুন দি। অথচ! হেতে হিগুন দি হাইনজে বয়ই জুয়া খেলি শেষ করি হেলাইবো। কিন্তু যাই চান গই হেতের বো, হোলাহাইন হরের দিন না খাই থাকেত্ত!
আইয়েন আগ্গাই, লালচান কাকারগো ঘরে মোট সদস্য আষ্ট(৮) জন। তিনগা হোলা, তিনগা মাঁইয়াঁ আর কাকা আর চাচি।
এর ভিত্তে হের বড্ডা আর মাইঝ্ঝা মাঁইয়াঁ ঢাকা শহরের কোন ব গার্মেন্সে চাকরি করে। হোলা বড্ডা গা ব বাজারের এক বেকারিত কাম করে। আর মাইজ্জা গা কোন এক শহরত নাকি চা দোয়ানে কাম করে। আর হোলা ছোড গা আন্ডা লগে মক্তবে যায়। আর মাইয়া ছোড গা ্ও যায় মক্তবে। হিতি হড়ে আর ছোট্ট আপুর লগে।
কাক্কা আর চাচি অত্তরে মাছ ছায় বা গাঙেত্তুন বালু উডাই ট্রলিতে বেচে। হোলা মাইয়ারা কে কত টেয়া দেয় হেকতা আন্ডা কেয় জানি না। হোলাহাইনে টেয়া হইসা দেয়ক আর না দেয়ক, আন্ডা কিন্তু কোন সমে দেখি নো অবার কিচু খাইতে বা চালচলনে বুজা যায় না দে হের হোলা মাইয়ারা চাকরি করে।
কাকার গো যে যিনিস আঁর আর অবাক লাইগতো, হেটা য়ইলো হেতাগো একচালা ঘর।
ঔম্বা ঘরের ভিতরে যাস্ট মাইদগিনারে এক্কেন বাঁশের বেয়া। আর দুই চাইড়ে হেতারা সিস্টেম করি থাআকতো। আর হেতারা হেতারগো লেভেলের ভিতরে এটা লইও বোয়ত খুসি!
আন্ডা লগে কাকার হুত যিগা হইডতো হেতের নাম শেখ ফরিদ। আর আন্ডা হেতেরে ডাকি শেক্কা বা শেক্কাইয়্য়া কই, যিনে হেতের লগে সম্পর্ক বালা থাইকলে বোলাইতাম ষেক্কা কই আর কইজ্জা কইলেস্ন শেক্কাইয়া। শেক্কার কতা কইতে গেলে হেতে বয়সে আন্ডা ত্তুন বেশাী বড্ডা না য়ইলে ও গায় গোয়ায় অনেক বড্ডা আচিল।
যাক হে কতা।
কাক্কা আর চাচিরে দেইকতাম দে যনগা গাংএ মাছ তাছ থাইকতো না হেসমে গাংগে বা চরায় (পাহাড়ি পানির প্রবাহ পথ) ডুব দি দি বালু তুইলতো। আর হেগুন বেচি যে টেয়া হাইতো হেগুলা দি দুই বেলা খানা দানা চইলতো।
হেতেনেরা তিন হোলা তিন মাইয়া লই এন্নে চলের, তিন্তু এলাকার বেবাক লোক যে এত্তুন ও কম লোকবল লই যে বিশাল উন্নতি করের হে দিকে কোন হেতেগো কোন খেয়াল নাই।
তার হরেও যেন্নে যার হেন্নে গেলে তো বালা আচিল। কিন্তু এর মধ্যে চাচির একদিন জ্বর য়ইলো। দ্বিতিয় ও তৃতীয় দিন গেল, মাগার উনার কোন উন্নতির লক্ষন দেইখলোনা এলাকার লোকজন।
বাড়ির আশেপাশের মা খালা রা যাই চাই আইয়ে আর হা হুতাশ করে।
আর মাতার উছে দুনিয়ার বেক হানি ঢালি হেলাত্ত। যেন এ হানি দি হেতারা রোগ শোগ বেক ধুই ছাপ করি হেলাইবো।
এতদিন য়ই গেল মাগার বালা কোন ডাক্তার দেখাইলো না। খালি লেফ দি চাবি চাবি হোতাই রাইখতো। লেফ দি চাবি রাইখলে বলে জ্বর ছলি যায়। কিন্তু আমার মনে য়দ্দে লেফ দি চাবি চাবি হের রুহ বার করার পরিকল্পনাই বেকে করের।
আর শেষ পর্যন্ত্ম সেটাই য়ইছে, মইরবের ১ দিন আগে হাসপাতালে নিলেও অজরাইল মশাই হেতেগো এই কষ্টের প্রতিবিধান করাল্লেই আর হরানন ন নিই খালি আতে হিঁরি যায় ন।
মরা লাশ বারিত আনার হরে হোলা মাইয়া বেকগুন আইছে।
বোয়ত কান্দাকাডি কইচ্চে।
মাইজ্জা হোলা ইজা তো উডানে ছাইড্ডাই ছাইড্ডাই কাইনতে কাইনতে উডানের ছাল উডাই হেলাইছে। কিন্তু হেতের মা মইচ্চে আইজ্জা ২ বৎসর হেতের গায়ের ছাল হইজ্জন্ত এলাকার কেয় দেখেনো বা হেতের আব্বার বারির আশে পাশে হতেরে দেখা যায় নো। হের পরে হঠাত করি একদিন বো আর কোলে ইগ্গা হোলা লই আইছিল বাপের লগে দেথা কইত্তো।
আর কাকার হোলা কাকার খোজ খবর না লয়ার আরেকটা কারন য়ইতে হারে যে, কাকার কোন যাগা জমি বা সম্পত্তি আছিল না। এমন কি ঘরের জাগাটুকুনও আমগো। হয়তো পোলায় নিজের জীবন সম্পর্কে চিন্তা করি কুল ন হাই আর এই সাময়িক কূলে আইতো চায় নো।
যাই য়ক, যদিও কাকা আর চাচির সম্পর্ক বোয়ত বালা আছিল, কিন্তু চাচি মইরবের ৪০ দিন হুইরবের আগেই কাকায় আরেকটা বো বিয়া করি লই আইছে!!!
এই কামেরলে কাক্কারে এলাকার বেকে চি চি কইল্লেও কাকার তাতে কোন লাজ লাইগজে এটা আঁই হলফ করি কইতাম হাইত্তান্ন।
এরহরে হুইনচিযে কাকার সংসারে এই বউ লই হোলা-মাইয়াগো লগে বোহত বেজাল হইছে।
বড্ডা ও মাইজ্জা মাঁইয়া গার্মেন্সে বিয়া করি হেলাইছে বলি হুইনছি।
আগে যা মাঝে মধ্যে আইতো, এয়ন হেইটা ও আইয়্যে না। অবশ্য মাইজ্জা মাইয়ার কোয়াল ভালা। দক্ষিন-পশ্চিম বঙ্গের এক অবস্থাপন্ন পরিবারের হোলার লগে বিয়া করি ফেলাইছে।
আর তৃতীয় কন্যা কোন এক রিক্সওলার লগে ভাগি গেছে। হয়তো হিতির কোয়ালে আরো দুঃখ আছে বলি চিন্তা কইচ্চিল বেবাকে। বা আসলে ছিল কিনা হেটা আমগোরে বুজানেল্লে হিতি আর হিতির হোয়া কোয়াল লই আমগো কারো দুয়ারে আইয়্যে ন।
আর বড় হোলা আমগো লগের গেরামের এক মাইয়ারে বিয়া কইচ্চিল কাকার তত্বাবধানে। হেতে এখন বুড়া হোর- হইর লগে হেতেগো বাইত বউ লই থাকে।
বাপের কোন খোজ খবর এন আর রাখে না। হয়তো নোয়া মার সংসারে হুরানো বাপের খবর লইবের দরকার মনে করেনো!
এর বিত্তে একদিন কাকাগো ঘরে সুন্দর পুটপুটে একপা মাইয়া দেইখলাম হঠাৎ করি। পরে খোজ লই যাইনতাম হাইলস্নাম যে হেটা আঙ্গো শেক্কার(কলিমের ঢাক নাম শেখ, কিন্তু সবাই শেক্কা বলে ঢাকে) বোউ!
বিয়া কইত্তে শেক্কার শরম না লাইগলেও হেতের বিয়ার খবর হুনি আর নিজের কাছে শরম লাগি উইডছিল।আর এর কারনে হেতের বিয়ার বিষয় লই উডানে উপস্থিত কতা বলারত আর মা - জেডাইরগো চোঁকের সামনে তুন আস্তে করি সরি গেছিলাম। কারন শত য়ক শেক্কাতো আঙ্গো লেন্ডাকালের দোস্ত !
হেই মুহুর্তে কাকার উপর বোহত রাগ য়ইছিল যে লেদা হোলা ইজারে কিল্লেই বিয়া করাই দিছে!
কিন্তু হরের ঘটনাগুলোর পরে এই রাগ তৃপ্তিতে রুপান্তর হই গেছিলো শেক্কার ভবিষ্যতের কতা চিন্তা করি।
বিয়ার কয়েকদিন হরের তুন এ শেক্কা হেতের হোর বাইত থাকা শুরু কইরছিল। আর হোরেরাও কাজ কামের সাফোর্ট হিসাবে হেতেরে রাখি দিছিলো, এ বিষয় লই শুশুরের সমাজে কোন দুইকতা হয় নো।
কিন্তু শেক্কা হোরবাইত থাকা শুরু কইরবের কয়েকমাস হইয্যন্ত কোনরকম কষ্টমষ্ট করি কাক্কা আছিল দেইখছি। হের হরে হঠাৎ করি একদিন দেয়া গেল দে কাকারগো ঘরে কেয় নাই। আশেপাশে খোজ খবর লই দেয়া গেল যে কেয় কাকারগো কতা জানে না! হঠাৎ করি উদাও!!
হের হরে একমাস, দুইমাস করি বহুদিন গত য়ইগেল। কেয় আর কোনদিকেত্তুন কাকার সংবাদ আর লই আইলোনা।
এক কান, দুই কান করি কাকার হোলামাইয়ারাও কাকার উদাও হই যাইবের কতা হুইনচে। কিন্তু কেউরে আর কাকার ঘর ভিডাত আই কাকারলে হা হুতাশ কইত্তে দেখি নো!
হেদিগেত্তুন দেয়া যেন মরা চাচির কোয়াল ই ভালা আছিল। অন্তত হোলামাইয়াগো কান্দনটা য়ইলেও চাচি হাইচে!!
কাকারগো ঘর ভিডায় এহন আর ঘর নাই। কাকারা চলি যাওয়াতে আঙ্গো যাগা আঙ্গো হাওলাতে আই গেছে।
নতুন মাডি হেলাইছে হিনে। নানান সব্জি তরকারির চাষ হয় হিনে।
আর হেদিকে রেইনলেই আর বাল্যবন্ধু শেক্কার কতা মনে হয়।
আর লালচান কাকার বিক্ষিপ্ত সংসারের কতা।
এক চাচির মিরবের হরে হের সংসারকান ভাঙ্গি তচনচ য়ই গেছে।
কাকার সংসার অন আর নাই হিনে। কোন নতুন মানুষ হিয়েনে তৈয়ার না হইলেও নতুন নতুন ঘাস তরুলতায় কাকার বসতবিডার জাগাকান অঙ্গাও হুরা, ভরহুর।।
লিখা : সাইফুল ইসলাম মজুমদার
১০ই জানুয়ারী,২০১৫
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন