লেখক: নীলাঞ্জনা অধরা
পঞ্চাশের কোঠা পার করেছেন রহমান
সাহেব।চুলে আর
গোফে আধাপাকা রং ধরেছে।সামান্য দশ
হাজার টাকা বেতনের ছোট্ট
একটা সরকারি চাকরি করেন।চাকরির টাকায়
ঘর ভাড়া আর মাসিক বাজারের টানাপোড়ন
সহ্য করতে হয় মাস শেষ হলেই।বড় মেয়ের
বিয়ের খরচ জোগাতে কড়া সুদে ধার
করা ঋণের টাকার চিন্তায়
বাড়তে থাকে ব্লাড প্রেসার।ছোট
মেয়েটার ও একুশ হয়েছে,সুদের
চাপে চাপা পড়া রহমান সাহেব নতুন কোন
ঝুকি নিতে পারেনা।নিত্যদিন স্ত্রীর নস্ট
হয়ে যাওয়া কিডনীর চিকিৎসার
দুশ্চিন্তা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে তাকে।হয়ত
একদিন অভাবের যন্ত্রনায় ক্লিষ্ট
হওয়া স্ত্রী চিকিৎসার অভাবেই
তাকে ছেড়ে দুর দেশে পাড়ি জমাবে।ভেতর
টা ক্ষত হয়ে যাওয়া রহমান সাহেবের
পরিবারে নতুন কোন আনন্দের জোয়ার
আসেনা।অভাবের যাতাকলে পিষ্ট হওয়া এই
মানুষগুলো নতুন বছরেও নতুন কোন সুখের সন্ধান
পায়না।
ফার্মগেট ওভারব্রিজে আজ দশ বছর
ধরে ভিক্ষা করে দুই পা খোড়া আব্দুল মতিন।
থার্টি ফার্স্ট নাইটে আশেপাশের দালান
গুলার ছাদ আতশবাজি তে ঝলমল করে,সাউন্ড
বক্সে জোরে বাজে হিন্দি গান,তরুন যুবক
যুবতি মাদকতায় টইটম্বুর হয়।মতিন ফকির এক
দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তার
ল্যাংড়া পাগুলোর দিকে।আল্লাহ যদি তার
পা গুলো কেড়ে না নিতো সে আজ কোন
উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি হতে পারত।নতুন
বছরে মতিন নতুন একটা দিনের স্বপ্ন দেখে।
স্বপ্নে একটা স্বচ্ছল মানুষ হওয়ার সুখে তার
চোখে মাদকতা ভর করে।কিন্তু বাস্তবতা হল
সকাল হলেই তার
খোড়া পা দুটো বয়ে নিয়ে সকলের
কাছে তার ভিক্ষা করতে হবে। নতুন বছরে নতুন
সুখ হাতছানি দেয়না মতিনের মত অসহায় দের।
ভার্সিটি পড়ুয়া সালমার
বান্ধবীরা প্রতি বছর নতুন বছর কে জমপেশ
আয়োজনে বরণ করে।দামী পোশাক,
পার্টি,নাচ গান, ডি জে,হাজার টাকার
ব্যাপার। প্রতিবারই কৌশলে ব্যাপার
টা এড়িয়ে যায় সালমা।রাত পোহালেই
ছোট বোনের স্কুলে ভর্তি,বই খাতা,বাবার
ঔষধ,মাস শেষে ফুরিয়ে যাওয়া চাল আর
তেলের হিসাব মেলাতে হবে তাকে।এসব
বিলাসিতা তার জন্য নয়।সংসারের বিশাল
ফর্দ টার আড়ালে চাপা পড়ে যায় তার
আত্মত্যাগের ছোট অধ্যায় টা।নতুন বছরে নতুন
অনেক গুলা দায়িত্ব তার কাধে আসে,কিন্তু
মুখে হাসি ফোটানোর মত নতুন কেউ আসেনা।
নতুন বছর আসে,যায়।ক্যালেন্ডার এ নতুন সাল
আসে।আনন্দ হয়,উল্লাস হয়। নিখুদ আতিথেয়তায়
বরণ করা হয় নতুন বছর কে।কিন্তু পুরানো দুক্ষ
বুকে নিয়ে হেটে বেড়ায় একদল মানুষ।রমণায়
ফুল বিক্রেতা হানিফ,সিনেমা হলের
সামনে অভাবের তাড়নায় দেহ
বিক্রেতা আসমা,বৃদ্ধ রিক্সাওয়ালা ফারুক
মিয়া,বা গার্মেন্টস শ্রমিক রহিমা সবাই সেই
আগের মতই থেকে যায়।এদের জীবনে নিউ
ইয়ার বলতে কোন শব্দ নেই।এদের কাছে নতুন
বছর মানেই নতুন কোন অভাবের সূচনা,নতুন কোন
অপ্রাপ্তির কান্না,নতুন কোন অস্তিত্বহীনতার
অনিশ্চিয়তা।
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন